‘চাচা ওঠেন, আমরা ডাকাত’

download‘ওরা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলল, “চাচা ওঠেন, আমরা ডাকাত।” আমি চোখ মেললে ওরা ঘরের আলো জ্বালল। আমি মুখ বাঁধা চারজনকে দেখলাম। তাঁদের হাতে আমার রান্নাঘরের দা আর বঁটি। তাঁরা আমার স্ত্রীকে ডেকে তুলতে বলল। আমার স্ত্রী স্ট্রোকের রোগী। আমি তাঁকে আস্তে ধাক্কা দিয়ে বললাম, ওঠো, বাসায় মেহমান আইছে।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে আগের রাতে নিজ বাড়িতে ঘটে যাওয়া ডাকাতির ঘটনা বর্ণনা করেন বাগেরহাটের মো. আবু সাঈদ মিঞা (৪৭)।

তাঁর বাড়ি বাগেরহাট শহরের সোনাতলা এপিএস ল্যাবরেটরিজের গলিতে।

আবু সাঈদ মিঞা বাগেরহাট জেলা কালেক্টরেটের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (এমএলএসএস)।

তাঁর স্ত্রী জামিলা খাতুন একই কার্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী (অফিস সহকারী)।

গতকাল বুধবার গভীর রাতে একদল ডাকাত তাঁদের নির্মাণাধীন বাড়ির দোতলার জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢোকে। তারা পরিবারের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালংকার, টাকাসহ প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

আজ সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আবু সাঈদ মিঞা পরিবারসহ নির্মাণাধীন বাড়ির দোতালায় থাকেন, নিচতলা ফাঁকা। দোতলার সামনের দিকের বারান্দা খোলা। এক পাশে দুটি বাঁশ দাঁড় করিয়ে রাখা। এই বাঁশ বেয়েই ডাকাতেরা দোতালায় উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ড্রয়িংরুমের জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। দোতালায় ফ্ল্যাটে ঢোকার জন্য একটি বড় দরজা থাকলেও ভেতরের ঘরগুলোয় কোনো দরজা নেই। শোয়ার ঘরে স্টিলের একটি আলমারির দরজা ভাঙা। বিছানা ওলট-পালট। খবর পেয়ে আবু সাঈদ দম্পতির সহকর্মীরা সমবেদনা জানাতে এসেছেন। সকালে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এই দম্পতির ভাষ্য, ডাকাতেরা তাঁদের আলমারিতে রাখা সোনার চেইন, আংটি, কানের দুলসহ প্রায় পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকার, ৪০ হাজার টাকা, একটি মুঠোফোন, ভাগনের ক্যামেরা ও ল্যাপটপ নিয়ে গেছে। এসবের আনুমানিক মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আবু সাঈদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ডাকাতেরা বাড়ির সবাইকে ঘুম থেকে তুলে একটি ঘরে নিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে রাখে। মারধর করেনি, তবে রান্নাঘর থেকে দা ও বঁটি নিয়ে সেগুলো দিয়ে ভয় দেখিয়েছে। গুলি করার হুমকি দিয়েছে, কিন্তু অস্ত্র দেখায়নি। তারা আলমারির চাবি চায়নি, নিজেরাই আলমারি ভেঙে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে।

আবু সাঈদ বলেন, ‘ছোট চাকরি করি। অনেক কষ্টে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে বাড়িটা বানাচ্ছি। এখনো অনেক কাজ বাকি। ভাড়া বাড়িতে থাকার সামর্থ্য নেই, তাই কোনো প্রকারে দোতলা থাকার মতো করে উঠে পড়েছি। ভেতরের দরজাগুলোও বানাতে পারিনি। এই অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটল। কখনো চিন্তাই করিনি আমার এমন ক্ষতি হতে পারে।’

এ ঘটনায় মামলা করতে রাজি নন আবু সাঈদ। সহকর্মীরা মামলার পরামর্শ দিলে এই প্রতিবেদকের তিনি বলেন, ‘যা যাওয়ার গেছে। ডাকাতও ধরা পড়বে না, মালও পাব না। মামলা করতে গিয়ে পুলিশকে টাকা দিতে পারব না।’

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আযম খান বলেন, ‘সোনাতলা এলাকায় একটি বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে বলে শুনেছি। পুলিশ সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। অভিযোগ পেলে মামলা করা হবে।’

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend