ক্রসফায়ার খুলনায় একদিনে নিহত ১৩

khulnaসুন্দরবনে পুলিশের সঙ্গে দুই দফায় বন্দুকযুদ্ধে বনদস্যু কাশেম বাহিনীর ১৩ সদস্য নিহত হয়েছে। গত রোববার ভোরে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটির জিরবুনিয়া গ্রামে ২ জন এবং দুপুর ২টার দিকে কালাবগি সংলগ্ন সুন্দরবনের গহিনে হড্ডায় ১১ জন নিহত হয়। এ ২টি এলাকা থেকে পুলিশ ১৭টি বন্দুক ও ৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় পাইকগাছা থানায় নিহতদের বিরুদ্ধে তিনটি ও পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করা হয়েছে। এর আগে খুলনাসহদক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বন্দুকযুদ্ধে একসঙ্গে এত সংখ্যক নিহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে নিহতদের লাশ বহন ও উদ্ধার করা নিয়ে গত তিন ধরে খুলনাজুড়ে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে নিহতদের মৃতদেহ গুলি যেভাবে ট্রলারে ওঠানো আর নছিমনে উঠিয়ে দড়ি দিয়ে বাধা হয়েছিল তা দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
সূত্র মতে, নিহতরা হলেন পাইকগাছা উপজেলার মাগুরা দেলুটির সবুর মোড়ল (৪০), দাকোপ কালাবগীর মো. হানিফ গাজী (৩৪), মংলার চিকনের দেওয়ান এলাকার আলিম মোল্যা (২৭), ডুমুরিয়ার টিপনা এলাকার আখিরুল শেখ (২৬) ও আফজাল শেখ (২৫), একই উপজেলার স্বরাপপুর এলাকার মাহাবুব মোল্যা (৩০) ও মফিজুল মোল্যা, টিপনা এলাকার শফিকুল শেখ (৪১), নাসরুল শেখ (২৪), গোলনা গ্রামের রুবেল শেখ (২০), জুনায়েদ খান (৩৫), ডুমুরিয়া থানার পেছনের এলাকার কারিমুল (৪৫) ও তেলিখালী গ্রামের হাবিবুর রহমান (৪০)।

পুলিশের দাবি, এ ঘটনায় ওসি সিকদার আক্কাছ আলী, এসআই জালাল উদ্দিন, এএসআই সোহেল রানা, কনস্টেবল সেলিম, তৈমুল হাসান ও সুমন আহত হয়েছেন।
খুলনার পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, রোববার ভোররাতে বনদস্যু কাশেম বাহিনী চাঁদার দাবিতে দেলুটির জিরবুনিয়া গ্রামের কলেজশিক্ষক প্রশান্ত কুমার ঢালীকে অপহরণ করে। এ সময় জনতা ও পুলিশ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গণপিটুনি ও পুলিশের গুলিতে করিমুল ও আজিবুর নামে দুই বনদস্যু নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে জনতার সহায়তায় ১১ ডাকাতকে আটক করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সুন্দরবনের গহিনে গাংরকির চরে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালে দুপুর ২টার দিকে কাশেম বাহিনীর অন্য সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এরই এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আটক ১১ বনদস্যু মারা যায়।
সাংবাদিকরা পাইকগাছা গিয়ে নিশ্চিত হন নিহত দু’জনকে নিয়ে এ অভিযানে পাইকগাছায় আসেন ডিআইজি খুলনা রেঞ্জ মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক আনিস মাহমুদ, পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। সন্ধ্যায় কিছু পর ১৩টি মৃতদেহ একটি ট্রলারে স্তূপ করে নিয়ে আসা হয়। বিবস্ত্র অবস্থায় লাশ ট্রলার থেকে নছিমনে ওঠানো হয়। এ সময় পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান স্বীকার করেন, নিহত ১৩ জনের নামে পাইকগাছা থানায় কোন মামলা নেই। ডিআইজি মনিরুজ্জামান জানান, মৃত ১৩ আসামির নামে বর্তমানে ৫টি করে মামলা হবে।
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিকদার আক্কাস আলী বলেন, আটকের পর বনদস্যুরা স্বীকার করে সুন্দরবনের গহিনে তাদের অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে। সে অনুযায়ী দুপুরে পুলিশ অভিযান চালায়। সকালের ঘটনার পর দস্যুদের কাছ থেকে ৯টি বন্দুক, ৩২ রাউন্ড গুলি ও একটি ট্রলার এবং দুপুরের ঘটনায় আরও ৮টি বন্দুক ও ২৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। নিহতদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, অপহরণ ও অস্ত্র আইনে পৃথক তিনটি ও পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দু’টি মামলা করা হয়েছে। তিনি জানান, নিহত ১১ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপর দু’জন আলিম মোল্যা ও আখিরুল শেখের লাশ পরিবারের গ্রহণ না করায় মঙ্গলবার আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট স ম বাবর আলী জানান, লাশগুলো টেনেহিঁচড়ে যেভাবে তোলা হয়ে তা অমানবিক। তিনি নিহতদের সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান। বলেন, তার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। আর তা ছাড়া নিহতদের একজন পাইকগাছার, দু’জন কয়রা, আর ১০ জন ডুমুরিয়ার। স ম বাবার আলী বলেন, বনদস্যুদের উৎপাত বেড়ে গিয়েছিল। তবে তিনি বেআইনিভাবে কিছু করতে রাজি নন।
ডুমুরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান খান আলী মুনছুর জানান, নিহত দু’জনকে তিনি চেনেন ডাকাত হিসেবে। তাদের নামে কোন অভিযোগও তিনি পাননি বা শোনেননি। ১৩ জন মানুষ ক্রসফায়ারে দেয়ার আগে তাদের আরও ভাল করে যাচাই করা উচিত ছিল।— মানব জমিন অনলাইনের সৌ্জ্যন্যে

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend